SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

জীববিজ্ঞান (পুরানো সংস্করণ) - কোষ বিভাজন - 3.2 মাইটোসিস (Mitosis)

এই কোষ বিভাজন প্রক্রিয়ায় প্রকৃত বা সুকেন্দ্রিক কোষ একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় বিভক্ত হয়ে দুটি অপত্য কোষে পরিণত হয়। মাইটোসিসে নিউক্লিয়াস প্রায় সমানভাবে একবার বিভাজিত হয়। নিউক্লিয়াসের প্রতিটি ক্রোমোজোমও একবার করে বিভাজিত হয়। সাইটোপ্লাজমও একবারই বিভাজিত হয়। তাই মাইটোসিস বিভাজনে কোষের মাতৃকোষ এবং অপত্য কোষে ক্রোমোজোম সংখ্যা, তথা DNA-এর পরিমাণ সমান থাকে। শুধু যে পরিমাণে একই থাকে তা নয়, মাতৃকোষের DNA-এর প্রায় হুবহু অনুলিপি অপত্য কোষে পাওয়া যায়। একে সমীকরণিক বিভাজনও বলে। এই বিভাজন প্রকৃত নিউক্লিয়াসযুক্ত জীবের দেহকোষে (somatic cell) হয়ে থাকে এবং বিভাজনের ফলে কোষের সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রাণী ও উদ্ভিদ দৈর্ঘ্যে এবং প্রস্থে বৃদ্ধি পায়। প্রাণীর দেহকোষে এবং উদ্ভিদের বর্ধনশীল অংশের ভাজক টিস্যু, যেমন: কাণ্ড ও মূলের অগ্রভাগ, ভ্রূণমুকুল এবং ভ্রূণমূল, বর্ধনশীল পাতা, মুকুল ইত্যাদিতে মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় বিভাজন হয়। নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদ এবং প্রাণীর অযৌন জননের সময়ও এ ধরনের বিভাজন হয়।

3.2.1 মাইটোসিসের পর্যায়সমূহ

মাইটোসিস কোষ বিভাজন একটি অবিচ্ছিন্ন বা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এই বিভাজনে প্রথমে ক্যারিওকাইনেসিস অর্থাৎ নিউক্লিয়াসের বিভাজন ঘটে এবং পরবর্তীকালে সাইটোকাইনেসিস অর্থাৎ সাইটোপ্লাজমের বিভাজন ঘটে। বিভাজন শুরুর আগে কোষের নিউক্লিয়াসে কিছু প্রস্তুতিমূলক কাজ হয়। এ অবস্থাকে ইন্টারফেজ পর্যায় বলে। বর্ণনার সুবিধার জন্য মাইটোসিসের নিউক্লিয়াসের বিভাজন প্রক্রিয়াকে পাঁচটি পর্যায়ে ভাপ করা হয়ে থাকে, পর্যায়গুলো হচ্ছে, প্রোফেজ, প্রো-মেটাফেজ, মেটাফেজ, অ্যানাফেজ এবং টেলোফেজ ।

(a) প্রোফেজ (Prophase)

এটি মাইটোসিসের প্রথম পর্যায়। এ পর্যায়ে কোষের নিউক্লিয়াস আকারে বড় হয় এবং ক্রোমোজোমগুলো আস্তে আস্তে সংকুচিত হয়ে মোটা এবং খাটো হতে শুরু করে। ক্রোমোজোমের এই পরিবর্তনের কারণ হিসেবে পূর্বে পানি বিয়োজনকে বিবেচনা করা হতো, তবে আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে ব্যাপারটি পানির সাথে সম্পর্কহীন অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া। যৌগিক অণুবীক্ষণ যন্ত্রে তখন এদের দেখা সম্ভব হয়। এ পর্যায়ে প্রতিটি ক্রোমোজোম সেন্ট্রোমিয়ার ব্যতীত লম্বালম্বি দুভাবে বিভক্ত হয়ে দুটি ক্রোমাটিড উৎপন্ন করে। ক্রোমোজোমগুলো কুণ্ডলিত অবস্থায় থাকায় এদের সংখ্যা গণনা করা যায় না ।

(b) প্রো-মেটাফেজ (Pro-metaphase)

এ পর্যায়ের একেবারে প্রথম দিকে উদ্ভিদকোষে কতগুলো তন্তুময় প্রোটিনের সমন্বয়ে দুই মেরু বিশিষ্ট স্পিন্ডল যন্ত্রের (spindle apparatus) সৃষ্টি হয়। স্পিন্ডল যন্ত্রের দুই মেরুর মধ্যবর্তী স্থানকে ইকুয়েটর বা বিষুবীয় অঞ্চল বলা হয়। কোষকংকালের মাইক্রোটিবিউল দিয়ে তৈরি স্পিন্ডলযন্ত্রের এক মেরু থেকে অপর মেরু পর্যন্ত বিস্তৃত, এদেরকে স্পিন্ডল তন্তু (spindle fibre) বলা হয়। এ পর্যায়ে ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার স্পিন্ডলযন্ত্রের কিছু নির্দিষ্ট তন্তুর সাথে সংযুক্ত হয়। এই তন্তুগুলোকে আকর্ষণ তন্তু (traction fibre) বলা হয়। ক্রোমোজোমের সাথে এই তন্তুগুলি সংযুক্ত বলে এদের ক্রোমোসোমাল তন্তুও বলা হয়। ক্রোমোজোমগুলো এ সময়ে বিষুবীয় অঞ্চলে বিন্যস্ত হতে থাকে। কোষের নিউক্লিয়াসের নিউক্লিয়ার মেমব্রেন ও নিউক্লিওলাসের বিলুপ্তি ঘটতে থাকে। প্রাণিকোষে শিন্ডল যন্ত্র সৃষ্টি ছাড়াও পূর্বে বিভক্ত সেন্ট্রিওল দুটি দুই মেরুতে অবস্থান করে এবং সেন্ট্রিওল দুটির চারদিক থেকে রশ্মি বিচ্ছুরিত হয়। একে অ্যাস্টার-রে বলে।

(c) মেটাফেজ (Metaphase)

এ পর্যায়ের প্রথমেই সব ক্রোমোজোম স্পিন্ডল যন্ত্রের বিষুবীয় অঞ্চলে দুই মেরুর মধ্যখানে) অবস্থান করে। প্রতিটি ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার বিষুবীয় অঞ্চলে এবং বাহু দুটি মেরুমুখী হয়ে অবস্থান করে। এ পর্যায়ে ক্রোমোজোমগুলো সর্বাধিক মোটা এবং খাটো হয়। প্রতিটি ক্রোমোজের ক্রোমাটিড দুটি পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হতে থাকে। এ পর্যায়ের শেষ দিকে সেন্ট্রোমিয়ারের বিভাজন শুরু হয় । নিউক্লিয়ার মেমব্রেন এবং নিউক্লিওলাসের সম্পূর্ণ বিলুপ্তি ঘটে।

(d) অ্যানাফেজ (Anaphase)

প্রতিটি ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার দুভাগে বিভ হয়ে যায়, ফলে ক্রোমোটিড দুটি আলাদা হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় প্রতিটি ক্রোমোটিডকে অপত্য ক্রোমোজোম বলে এবং এতে একটি করে সেন্ট্রোমিয়ার থাকে। অপত্য ক্রোমোজোমগুলো বিষুবীয় অঞ্চল থেকে পরস্পর বিপরীত মেরুর দিকে সরে যেতে থাকে। অর্থাৎ ক্রোমোজোমগুলোর অর্ধেক এক মেরুর দিকে এবং বাকি অর্ধেক অন্য মেরুর দিকে

 অগ্রসর হতে থাকে। অগত্য ক্রোমোজোমের মেরু অভিমুখী চলনে সেন্ট্রোমিয়ার অগ্রগামী থাকে এবং বাহুদ্বয় অনুগামী হয়। সেন্ট্রোমিয়ারের অবস্থান অনুযায়ী ক্রোমোজোমগুলো V, L, J বা I-এর মতো আকার ধারণ করে। এদেরকে যথাক্রমে যেটাসেট্রিক, সাবমেটাসেন্ট্রিক, অ্যাক্রোসেন্ট্রিক বা টেলোসেন্ট্রিক বলে। অ্যানাফেজ পর্যায়ের শেষের দিকে অপত্য ক্রোমোজোমগুলো স্পিন্ডলযন্ত্রের মেরুপ্রান্তে অবস্থান নেয় এবং ক্রোমোজোমের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পেতে থাকে।

(e) টেলোফেজ (Telophase)

এটি মাইটোসিসের শেষ পর্যায়। এখানে প্রোফেজের ঘটনাগুলো পর্যায়ক্রমে বিপরীতভাবে ঘটে। ক্রোমোজোমগুলো আবার সরু ও লম্বা আকার ধারণ করতে থাকে। এর কারণ হিসেবে পূর্বে পানি যোজনকে বিবেচনা করা হতো তবে আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া যা ক্রোমোজমের পানির পরিমাণের উপর নির্ভরশীল নয়। অবশেষে এরা জড়িয়ে গিয়ে নিউক্লিয়ার রেটিকুলাম গঠন

 করে। নিউক্লিওলাসের পুনরাবির্ভাব ঘটে। নিউক্লিয়ার রেটিকুলামকে ঘিরে পুনরায় নিউক্লিয়ার মেমব্রেনের সৃষ্টি হয়, ফলে দুই মেরুতে দুটি অপত্য নিউক্লিয়াস গঠিত হয়। স্পিন্ডলযন্ত্রের কাঠামো ভেঙে পড়ে এবং ভগুলো ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে যায়। টেলোফেজ পর্যায়ের শেষে বিষুবীয় তলে এন্ডোপ্লাজমিক জালিকার ক্ষুদ্র অংশগুলো জমা হয় এবং পরে এরা মিলিত হয়ে কোষপ্লেট গঠন করে। সাইটোপ্লাজমিক অঙ্গাণুসমূহের সমবণ্টন ঘটে। ফলে দুটি অপত্য কোষ (daughter cell) সৃষ্টি হয়। প্রাণীর ক্ষেত্রে স্পিন্ডলযন্ত্রের বিষুবীয় অঞ্চল বরাবর কোষঝিল্লিটি গর্তের মতো ভিতরের দিকে ঢুকে যায় এবং এ গর্ত সবদিক থেকে ক্রমান্বয়ে গভীরতর হয়ে একত্রে মিলিত হয়, ফলে কোষটি দুভাগে ভাগ হয়ে পড়ে।

দলগত কাজ

কাজ : সেন্ট্রোমিয়ারের অবস্থান অনুসারে বিভিন্ন ধরনের ক্রোমোজোমের মডেল নির্মাণ।

প্রয়োজনীয় উপকরণ : দড়ি বা সুতা, আর্ট পেপার, আঠা, স্কচটেপ, কাটার, সাইনপেন ইত্যাদি।

পদ্ধতি : প্রথমে আমরা তৈরি করব মেটাফেজ দশায় দৃশ্যমান ক্রোমোজোমের মডেল। একই দৈর্ঘ্যের দড়ি বা সুতার দুটি টুকরো নাও। এই টুকরা দুটো হলো একই ক্রোমোজোমের দৃটি সিস্টার ক্রোমাটিডের মডেল। এমনভাবে এদেরকে গিট দাও যাতে পিটটি উভয়ের দৈর্ঘ্যের মাঝখানে পড়ে। গিটটি হলো সেন্ট্রোমিয়ারের মডেল। ঠিকমতো মাঝখানে গিটটি দিতে পারলে যা পাওয়া যাবে তা হলো একটি মেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোমের মডেল, যার সেন্ট্রোমিয়ার থেকে চারটি বাহু বের হয়ে আছে বলে মনে হয়। চার বাহুর দুটি হলো একটি ক্রোমাটিডের আর অপর দুটি অপর ক্রোমাটিডের। সবগুলো বাহুর দৈর্ঘ্য সমান। একইভাবে আরও দুই টুকরা সমান মাপের দড়ি বা সুতা নিয়ে মাঝখান থেকে একটু সরিয়ে গিঁট দিয়ে সাবমেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোমের মডেল তৈরি কর। প্রান্ডের খুব নিকটে গিঁট দিলে তৈরি হবে অ্যাক্রোসেট্রিক ক্রোমোজোমের মডেল। একদম প্রান্তে যদি গিঁট দেওয়া হয় তাহলে সেটা হবে টেলোসেট্রিক। এবার চার ধরনের ক্রোমোজোমের মডেল একটি আর্টপেপারে আঠা বা স্কচটেপ দিয়ে লাগাও। সাইনপেন দিয়ে কোনটি কী তা লেখ এবং অংশগুলো লেবেল কর। লেবেলে অবশ্যই মেটাফেজ কথাটি উল্লেখ করবে।

এবার একইভাবে এনাফেজ দশায় ক্রোমোজোম, অর্থাৎ ক্রোমাটিডগুলোকে কেমন দেখা যায় তার মডেল বানাতে হবে। এজন্য প্রথমে মেটাফেজ দশার ক্রোমোজোমের মডেল বানাও। মেটাসেন্ট্রিক, সাবমেটাসেন্ট্রিক, জ্যাক্রোসেন্ট্রিক এবং টেলোমেট্রিক - চারটিরই। এনাফেজ দশায় সেন্ট্রোমিয়ার বরাবর প্রতিটি ক্রোমোজোম এমনভাবে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায় যাতে একটি ভাগে কেবল একটি ক্রোমাটিড পড়ে। সাথে নিয়ে যায় সেন্ট্রোমিয়ারের সেই অর্ধেকটুকু যেটা তার অং এখানেও আমরা মেটাফেজ দশার একটি ক্রোমোজোমের মডেলকে পিট বরাবর কেটে দুই ভাগ করব, যাতে একটি ভাগে থাকে একটিই ক্রোমাটিড। তখন দেখা যাবে, মেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম থেকে প্রাপ্ত ক্রোমাটিড দুটির প্রতিটিই দেখতে ইংরেজি v বর্ণের মতো যেহেতু তার সেন্ট্রোমিয়ার থাকে ক্রোমাটিডের ঠিক মাঝখানে। মাঝখান থেকে একটু পাশের দিকে থাকা সেন্ট্রোমিয়ারবিশিষ্ট সাবমেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোজোম থেকে অনুরূপভাবে অর্ধেক করে কেটে আলাদা করা ক্রোমাটিডের চেহারা হবে ইংরেজি বর্ণের মতো। একইভাবে অ্যাক্রোসেন্ট্রিক ও টেলোসেক্ট্রিক ক্রোমোজোম থেকে প্রাপ্ত ক্রোমাটিড হবে যথাক্রমে ইংরেজি ] এবং বর্ণের মতো। এবার চার ধরনের ক্রোমাটিডের মডেল একটি আর্টপেপারে আঠা বা স্কচটেপ দিয়ে লাগাও। সাইনপেন দিয়ে কোনটি কী তা দেখ এবং অংশগুলো লেবেল কর। লেবেলে অবশ্যই এনাকেজ কথাটি উল্লেখ করবে।

তারপর উত্তর আর্টপেপারে দেখানো মডেল শ্রেণিকক্ষে প্রদর্শন কর। কোন ধরনের ক্রোমোজোম বা ক্রোমাটিড মেটাফেজ বা এনাফেজ দশায় কেমন চেহারা নেয়, তার কারণ ব্যাখ্যা কর।

 

Content added By
Content updated By
Promotion
Content for the offcanvas goes here. You can place just about any Bootstrap component or custom elements here.